ঢাকা,বুধবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪

১৭ ব্যবসায়ীর সংবাদ সম্মেলন

চকরিয়া জনতা শপিং টাওয়ারের মালিক পক্ষের প্রতারণা ও হয়রানির শিকার

বার্তা পরিবেশক ::  কক্সবাজারের চকরিয়া পৌরশহরের জনতা শপিং সেন্টারের মালিক পক্ষের প্রতারণার শিকার হওয়ার অভিযোগ তুলেছেন ১৭জন নিরীহ ব্যবসায়ী। মিথ্যা মামলায় আদালতের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন তারা। কোথাও আশার আলো দেখছেন না। অবৈধ ক্ষমতার ইশারায় ১৭ নিরীহ ব্যবসায়ী অন্ধকার পথে হাবুডুবু খাচ্ছেন। মার্কেট মালিকের ওয়ারিশদের প্রতারণার ফাঁদে পড়ে আর্থিকভাবে দেউলিয়া হয়ে পড়েছেন মার্কেটের পুরাতন এসব ব্যবসায়ী। প্রতারণার শিকার ১৭ ব্যবসায়ীর পক্ষে বৃহস্পতিবার (১১ মে) বিকালে কক্সবাজার প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত তুলে ধরেন ক্ষতিগ্রস্তরা।

তাদের পক্ষে লিখিত বক্তব্য রাখেন মাওলানা নুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, চকরিয়া পৌরশহরের জনতা মার্কেটের মালিক মরহুম মোজাহের আহমদ কোম্পানী জীবিত থাকা অবস্থায় চিরিংগা মৌজার বিএস ২৩৩ নম্বর খতিয়ানের ৩১২ ও ৩১৩ দাগের উপর নির্মিত নিউ জনতা সুপার মার্কেটের প্রথম তলায় ১৬টি ও ২য় তলায় ৩টিসহ মোট ১৯টি দোকানের সালামী দিয়ে ও দীর্ঘমেয়াদী চুক্তিবদ্ধ হয়ে দোকানের মালিকানা ক্রয় করে ১৭জন ব্যবসায়ী। পরবর্তীতে ১৯৯৭-২০০৮ সাল পর্যন্ত এসব ব্যবসায়ীরা শান্তিপুর্ণভাবে তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালিয়ে আসছিলেন। মোজাহের আহমদ কোম্পানীর মৃত্যুর পর তার ওয়ারিশদের সাথেও নতুন মার্কেটে প্লট বুঝে পাওয়ার জন্য চুক্তিনামা সম্পাদন করেন এসব ব্যবসায়ী।

নিউ জনতা সুপার মার্কেটের মালিক মোজাহের আহমদ কোম্পানীর সাথে ১৭ জন ব্যবসায়ীর সালামী দিয়ে চুক্তি থাকায় ওই চুক্তি মতে নতুন নির্মিত জনতা শপিং সেন্টারের নির্ধারিত দোকান ব্যবসায়ীদেরকে বুঝিয়ে দেয়ার শর্তে মরহুম মোজাহের আহমদ কোম্পানীর ওয়ারিশগনের সাথে নতুনভাবে আলাদা আলাদা চুক্তিনামা সম্পাদন করেন ১৭জন ব্যবসায়ী। ওই চুক্তিনামায় মরহুম মোজাহের আহমদ কোম্পানীর দেওয়া পুর্বের চুক্তিনামার সকল শর্ত মেনে নিয়ে নতুনভাবে আর কোন প্রকার টাকা দাবী না করার অঙ্গিকারনামা দেয়া হয় চুক্তিবদ্ধ ব্যবসায়ীদের।

সংবাদ সম্মেলনে ক্ষতিগ্রস্ত চকরিয়া উপজেলা যুবলীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম শহীদ, হাজী জালাল আহমদ, নুরুল ইসলাম বাবুল, নজরুল ইসলাম মানিক, আবুল হাশেম, ওসমান গণি, নজরুল ইসলাম, ছৈয়দ আলম, ওয়াহিদুল আলম, আবুল হাশেম (হাশেম টাওয়ার) মোজাম্মেল হক, জহিরুল ইসলাম, ছৈয়দ হোসেন, মাহাবুবুর রহমান, ইমাম হোসেন ও রওশন আরা বেগম উপস্থিত ছিলেন।

তাদের অভিযোগ, নতুনভাবে মার্কেটটি নির্মাণকাজ শেষ হলেও বর্তমানে তাদের দোকানগুলো পুণরায় বুঝিয়ে দিতে মালিকপক্ষের লোকজন নানা তালবাহানা করছেন। এই অবস্থার কারণে উল্লেখিত ১৭ জন ব্যবসায়ী দীর্ঘ একযুগ ধরে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। ব্যবসায়ীদের নামে চুক্তিবদ্ধ হওয়া দোকানঘর বুঝিয়ে না দিয়ে উল্টো নানাভাবে তদের হয়রানি করছেন মালিকপক্ষ।

সংবাদ সম্মেলনে ক্ষতিগ্রস্তরা আরও জানান, প্রতারণার শিকার ওই ১৭ ব্যবসায়ী নিরুপায় হয়ে ২০২০ সালে আদালতের আশ্রয় নিয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের দোকানগর বুঝে দিতে এবং ২ কোটি ৮৫ লাখ টাকার ক্ষতিপুরণ চেয়ে কক্সবাজার যুগ্ম জেলা জজ (২য়) আদালতে একটি মামলা (যার মামলা নং ৬৯/২০২০) দায়ের করেছেন ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীরা। এ মামলায় জনতা শপিং সেন্টারের মালিকগনকে বিবাদী করা হয়েছে।

প্রতারিত ব্যবসায়ীরা জানান, তাদের পক্ষথেকে কক্সবাজার যুগ্ম জেলা জজ (২য়) আদালতে রুজু করা অপর মামলা (নং ৬৯/২০২০) চ্যালেঞ্জ করে মার্কেট মালিকপক্ষের (মোজাহের আহমদ কোম্পানীর ছেলে) আনোয়ার আলমসহ ৬জন একই আদালতে একটি মিচ মামলা (নং ০৭/২১) ও মোজাহের আহমদ কোম্পানীর স্ত্রী আলহাজ ছালেহা বেগমসহ ১০জন একীভুত হয়ে আরো একটি মিচ আপীল মামলা (নং ০৬/২১) দায়ের করেন। দীর্ঘ শুনানী শেষে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিজ্ঞ বিচারক গত ১৮/০৮/২১ইং দুটি মিচ আপীল মামলায় আদেশ দেন।

আদেশে আদালত বলেন, উল্লেখিত ১৭ জন ব্যবসায়ীয় অভিযোগ মতে তাদের সঙ্গে চুক্তি থাকা চকরিয়া জনতা সেন্টার মার্কেটের ১ম তলায় ৯১, ৯২, ৯৩, ৯৪, ৯৫, ৯৬, ৯৭, ১০০, ১০১, ১০২, ১০৩,১০৪,১০৫, ১০৬, ১৫৭, ১৫৮ নম্বর দোকান এবং ২য় তলায় ১০০, ১০১, ১০২ নং দোকানঘরসহ মোট ১৯টি দোকান উল্লেখিত মোকদ্দমা নিস্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত অন্যত্র বিক্রয় কিংবা ভাড়া প্রদান থেকে বিরত থাকার জন্য অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশ দ্বারা বারিত করা হইল। একইসঙ্গে মামলার নথি নিন্ম আদালতে প্রেরণের নির্দেশ দেন আদালতের বিচারক।

চকরিয়া জনতা শপিং সেন্টারে স্ব স্ব দোকানের প্লটের মালিকানা বুঝিয়ে দেওয়ার শর্তে মার্কেট মালিক ও ১৭ জন দোকান প্লট গ্রহিতার মধ্যে নোটারী পাবলিক কক্সবাজারের মাধ্যমে ৩শত টাকার লিখিত স্ট্যাম্পে চুক্তিনামাপত্র সম্পাদন করা হয়।
চুক্তিনামায় পূর্বের ১৭ জন দোকানঘর মালিকের পক্ষে আদালতে মামলা থাকায় মার্কেটের মোট ১৯ টি দোকান মার্কেট মালিকদের সাথে নতুন করে কোন প্রকার বায়নানামা চুক্তি না করার কথাও উল্লেখ করা হয়।

চুক্তিনামায় আরো শর্ত ছিল, মরহুম মোজাহের কোম্পানীর ওয়ারিশগণ ১ বছরের মধ্যে নবনির্মিত জনতা শপিং সেন্টারের পুর্বের দোকানের প্লট স্ব স্ব মালিকদের বুঝিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু জনতা শপিং সেন্টারের মালিক ও ডেভেলাপমেন্ট কোম্পানী ওই দোকান গুলো পূর্বের মালিকদের কাছে হস্তান্তর না করে গত ১২বছর ধরে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে পূর্বের ব্যবসায়ীদেরকে হয়রানি করে আসছেন। এ কারণে ওই ১৭ জন দোকান মালিক তাদের দোকানের প্লট বুঝে না পাওয়ায় চরমভাবে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন।

এ ব্যাপারে ক্ষতিগ্রস্ত দোকান মালিকরা প্রশাসনসহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

পাঠকের মতামত: